Symphony কোন দেশের কোম্পানি? মালিক, সিইও এবং বিস্তারিত তথ্য

সিম্ফনি (Symphony) বাংলাদেশের মোবাইল ফোন বাজারে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্র্যান্ড, যা সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত ফিচার ফোন এবং স্মার্টফোন সরবরাহ করে। বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে সিম্ফনির ফোনগুলো তাদের ব্যবহারকারী-বান্ধব ফিচার এবং সাশ্রয়ী দামের জন্য গ্রহণযোগ্য।

কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন, সিম্ফনি কোন দেশের কোম্পানি? এর মালিক কে এবং সিইও কে? এই আর্টিকেলে আমরা সিম্ফনি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবো, যা আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দেবে এবং গুগলে র‌্যাঙ্ক করার জন্য এসইও-অপটিমাইজড হবে।

সিম্ফনি কোন দেশের কোম্পানি?

সিম্ফনি হলো একটি বাংলাদেশী মোবাইল ফোন নির্মাতা কোম্পানি, যার সদর দপ্তর ঢাকা, বাংলাদেশে অবস্থিত। এটি এডিসন গ্রুপ (Edison Group) নামক বাংলাদেশী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অধীনে পরিচালিত হয়।

সিম্ফনি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রাথমিকভাবে চীন থেকে আমদানি করা মোবাইল ফোন রিব্র্যান্ড করে বাজারজাত করত। বর্তমানে, সিম্ফনি বাংলাদেশের সাভারের জিরাবোতে নিজস্ব কারখানায় মোবাইল ফোন অ্যাসেম্বল করে এবং ২০২০ সাল থেকে ফোনের মাদারবোর্ড উৎপাদন শুরু করেছে।

এটি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে একটি, যা সাশ্রয়ী মূল্যে ফিচার ফোন এবং স্মার্টফোন সরবরাহ করে।

দ্রষ্টব্য: সিম্ফনি মোবাইলের সঙ্গে ভারতের Symphony Limited নামক একটি কোম্পানির নামের মিল থাকলেও এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। Symphony Limited ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদে অবস্থিত একটি বহুজাতিক ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি, যা এয়ার কুলার তৈরি করে। এই আর্টিকেলে আমরা শুধুমাত্র সিম্ফনি মোবাইল সম্পর্কে আলোচনা করছি।

সিম্ফনির মালিক কে?

সিম্ফনি মোবাইল এডিসন গ্রুপ নামক বাংলাদেশী ব্যবসায়িক গ্রুপের অধীনে পরিচালিত হয়। এডিসন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান হলেন জাকারিয়া শহীদ (Jakaria Shahid)

তিনি ২০০৮ সালে সিম্ফনি মোবাইল ব্র্যান্ড চালু করেন। জাকারিয়া শহীদ এবং তার টিম, যারা পূর্বে সিমেন্স বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করেছিলেন, সিম্ফনির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে মোবাইল ফোন বাজারে আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন।

সিম্ফনির সিইও কে?

সিম্ফনি মোবাইলের সিইও হলেন এম হানিফ (MA Hanif) তিনি এডিসন গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এম হানিফ সিম্ফনির বাজার সম্প্রসারণ এবং বাংলাদেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

তিনি সিম্ফনির দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং গুণগত মানের উপর জোর দিয়ে ব্র্যান্ডটিকে বাংলাদেশের শীর্ষ মোবাইল ব্র্যান্ডে পরিণত করেছেন।

সিম্ফনির ইতিহাস প্রতিষ্ঠা

সিম্ফনি মোবাইল ২০০৮ সালে এডিসন গ্রুপের অধীনে যাত্রা শুরু করে। প্রাথমিকভাবে, কোম্পানিটি চীন থেকে আমদানি করা মোবাইল ফোন রিব্র্যান্ড করে বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি করত। ২০১২ সালের শেষের দিকে সিম্ফনি তাদের প্রথম অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন Symphony W20 বাজারে আনে, যা ,১৫০ টাকা মূল্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

২০১৮ সাল থেকে সিম্ফনি বাংলাদেশের সাভারের জিরাবোতে নিজস্ব কারখানায় মোবাইল ফোন অ্যাসেম্বল শুরু করে। ২০২০ সালের শেষের দিকে তারা বাংলাদেশে মাদারবোর্ড উৎপাদন শুরু করে, যা দেশের মোবাইল শিল্পে একটি মাইলফলক।

২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সিম্ফনি বাংলাদেশের বাজারে সর্বাধিক বিক্রিত মোবাইল ব্র্যান্ড হিসেবে নেতৃত্ব ধরে রাখে, এমনকি ফিনল্যান্ডের নকিয়াকে পেছনে ফেলে। বর্তমানে সিম্ফনি বাংলাদেশের মোবাইল ফোন বাজারের প্রায় ৫০% শেয়ার ধরে রেখেছে।

সিম্ফনির জনপ্রিয়তার কারণ

সিম্ফনির জনপ্রিয়তার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে:

  1. সাশ্রয়ী মূল্য: সিম্ফনি সাশ্রয়ী দামে ফিচার ফোন এবং স্মার্টফোন অফার করে, যা বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে।

  2. মাল্টিমিডিয়া ফিচার: সিম্ফনির ফোনগুলো মাল্টিমিডিয়া সমর্থিত, যা তরুণদের কাছে আকর্ষণীয়।

  3. দেশীয় উৎপাদন: বাংলাদেশে নিজস্ব কারখানায় ফোন উৎপাদনের ফলে সিম্ফনি দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেছে।

  4. ব্যাপক বিতরণ নেটওয়ার্ক: সিম্ফনির প্রায় ১৭,০০০ আউটলেট এবং ৪৪টি কাস্টমার কেয়ার সেন্টার রয়েছে, যা দেশের আনাচে-কানাচে পণ্য পৌঁছে দেয়।

বাংলাদেশে সিম্ফনির জনপ্রিয় মডেলগুলোর মধ্যে রয়েছে Symphony Z60, Symphony V99, এবং Symphony Roar A50 এই ফোনগুলো বাজেট-বান্ধব এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।

সিম্ফনির বৈশ্বিক উপস্থিতি

সিম্ফনি প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের বাজারে কেন্দ্রীভূত, তবে তারা কিছু প্রতিবেশী দেশে তাদের পণ্য রপ্তানির পরিকল্পনা করছে।

বাংলাদেশে সিম্ফনির তিনটি কারখানা রয়েছে: প্রথমটি সাভারের জিরাবোতে, দ্বিতীয়টি একই এলাকায়, এবং তৃতীয়টি গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে। এই কারখানাগুলো মাসে প্রায় - লাখ ফোন উৎপাদন করতে সক্ষম। সিম্ফনি ভবিষ্যতে বিদেশে ফোন রপ্তানি করে বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের লক্ষ্য নিয়েছে।

সিম্ফনির প্রতিযোগিতা

সিম্ফনি বাংলাদেশের বাজারে নকিয়া, স্যামসাং, শাওমি, এবং ইটেলের মতো ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। তবে, সিম্ফনির সাশ্রয়ী মূল্য এবং দেশীয় উৎপাদন এটিকে বাজারে আলাদা অবস্থান দিয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, সিম্ফনির ফিচার ফোনগুলো বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়, যেখানে এখনও ৭০% মানুষ ফিচার ফোন ব্যবহার করে।

সিম্ফনির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সিম্ফনি ভবিষ্যতে নিম্নলিখিত কৌশলগুলোর উপর জোর দিচ্ছে:

  • দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি: সিম্ফনি তাদের কারখানায় উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে মাসে ১২-১৫ লাখ ফোন তৈরির পরিকল্পনা করছে।

  • রপ্তানি সম্প্রসারণ: সিম্ফনি বিদেশে মোবাইল ফোন রপ্তানি করে বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের লক্ষ্য নিয়েছে।

  • নতুন প্রযুক্তি: সিম্ফনি আরও উন্নত স্মার্টফোন এবং ৫জি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে।

  • কর্মসংস্থান: সিম্ফনির কারখানাগুলো বাংলাদেশে প্রায় ,০০০ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে, এবং তৃতীয় কারখানা চালু হলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।

উপসংহার

সিম্ফনি একটি বাংলাদেশী মোবাইল ফোন ব্র্যান্ড, যা এডিসন গ্রুপের অধীনে পরিচালিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা মালিক হলেন জাকারিয়া শহীদ, এবং সিইও হলেন এম হানিফ

সিম্ফনি তার সাশ্রয়ী মূল্য, মাল্টিমিডিয়া ফিচার এবং দেশীয় উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশে জনপ্রিয়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনার সিম্ফনি কোন দেশের কোম্পানি সম্পর্কিত সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।

আর্টিকেলটি পড়ে কেমন লাগলো, কমেন্টে জানান এবং শেয়ার করতে ভুলবেন না!


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন